কিংবদন্তি ফুটবলার দস্তগীর হোসেন নীরার ৫৫ তম জন্মদিন আজ

নিউজ লাইফ লন্ডন ডেস্ক : দস্তগীর হোসেন নীরা । বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অবিস্মরণীয় নাম । আজ ৮ জুলাই নীরার ৫৫ তম জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের এই দিনে শিল্পনগরী খুলনায় ইসমাইল হোসেন ও ফয়জুন্নেসা দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন দেশ সেরা সাবেক এই ডিফেন্ডার ।
সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকে সহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জন্মদিনে শুভেচ্ছায় শিক্ত হয়েছেন নিরা । Newslife24.com ও tv19online.com এর পক্ষ থেকেও তাকে জানাচ্ছি জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।শুভ জন্মদিন ।

শৈশবে পরিবারের আপত্তি থাকলেও গোল বলের উপর নীরার জাদুকরী মাধুর্য দেখে একসময় ফুটবল খেলতে উৎসাহিত করেন তার বাবা মা। ১৯৮১ সালে জহির ওস্তাদের হাত ধরে খুলনা ইয়ং মুসলিম স্পোর্টিং ক্লাবে খেলার মধ্যে দিয়ে প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে যাত্রা শুরু তার ।
অনূর্ধ-১৬ জাতীয় দলের অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্বও পালন করেন নিরা ।তিনি ছিলেন ফুটবলের বা পায়ের শিল্পী।নিখুত পায়ের কারুকার্যের মাধ্যমে ফুটবল পিপাসুদের সম্মোহিত করে রাখতেন তিনি।

অনুর্ধ -১৯ জাতীয়দলেও তার নৈপুণ্য ছিলো প্রশংসনীয়।নীরার খেলার যাদুকরী মাধুর্য মাঠের দর্শকদের উপভোগের খোরাক মিটাতো । শুধু তার নামেই এক শ্রেণীর দর্শক সমাগম হতো বেশি। ভদ্র, মার্জিত, পরিচ্ছন্ন খেলা ছাড়াও নীরার খেলার যাদুকরী নৈপুণ্য যারা না দেখেছেন, তাদের পক্ষে তা ধারণা করা কঠিন।

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই নীরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশে। ফুটবলের সেরা ডিফেন্ডার হিসাবে । ঢাকার লীগে খেলেছেন ভিক্টোরিয়া ক্লাব ,আদমজী ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, আবাহনী ,ধানমন্ডি ক্লাব ও মোহামেডান ক্লাবের হয়ে । বাঁ পা বা শরীরের যে কোন অংশ দিয়ে চুম্বকের মত বল রিসিভ থেকে শুরু করে সমুদ্রের ঢেউ-এর মত স্বচ্ছ-সাবলীল ও মনকাড়া ড্রিবলিং বা সবচেয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা সহযোগীর কাছে বল ঠেলে দিয়ে দুর্দান্ত আক্রমণ রচনার কুশলী নীরাকে তার সময়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ডিফেন্ডারের মর্যাদা দিয়েছে। এ গুণগুলো অর্জন করতে তাকে কত অসংখ্য প্রহর ক্লান্তিহীন পরিশ্রম, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা ব্যয় করতে হয়েছে- তার খবর কে রাখে । তাই তো শুধু অগণিত দর্শক নয়, সুদক্ষ ফুটবলারদের কাছেও নিরা আজও স্বপ্নের এক খেলোয়াড়।

১৯৮৭ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় নীরার।একই বছর পাকিস্তানে কায়েদে আজম ইন্টারন্যাশনাল ফুটবল টুর্নামেন্ট অংশ নিয়ে তার অসাধারণ ড্রিবলিং, নির্ভুল ট্যাকলিং এর জন্য আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসেন । এর পর দেশের হয়ে তিনি নয়ন জুড়ানো ফুটবল খেলেন সৌদিআরব, দুবাই, ব্যাংকক, ইরান, ও ভারতেন বিপক্ষে ।তাঁর নেতৃত্বে শেরেবাংলা কাপ জাতীয় ফুটবলে খুলনা জেলা দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

বিলেতে বসবাসরত সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ইউকের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ সুমনের মামা দস্তগীর হোসেন নীরা । Newslife24.com এর সাথে আলাপ কালে সুমন বলেন ছেলেবেলা থেকেই মামার প্রশংসা শুনে স্বপ্ন দেখতাম বড় হয়ে মামার মত বড় ফুটবলার হবো । মামা ছিলেন জীবনের আইডল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেতে পাড়ি জমানোর কারণে সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে সুমন তার মামা নীরার মতো আদর্শ মানুষ হতে চান।সন্তানকে গড়ে তুলতে চান সফল ফুটবলার হিসাবে ।১৯৯০ সালে ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড কাপ প্রাক নির্বাচনী খেলা খেলতে গিয়ে পায়ে দারুন ব্যাথা পান নিরা ।আর এই ব্যথাই তাঁকে শেষ পর্যন্ত জাতীয় দল থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। তবে লীগে ও অন্যান্য ঘরোয়া খেলায় তিনি নয়ন জুড়ানো ফুটবল খেলেছেন দীর্ঘ দিন ধরে ।পেশাগত ভাবে বর্তমানে তিনি একজন সনামধন্য কোচ।

নতুন প্রজন্মের কাছে বা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের সেরাদের তালিকায় হয়তো নিরা নামটি খুব বেশি সুপরিচিত নয়। তবে বাম পায়ের নিখুত কারুকার্যের জন্য বাংলাদশের ফুটবল ইতিহাসে অনেক দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই কিংবদন্তি ফুটবলার।