বিএনপির মেয়র প্রার্থীর ১৯ দফার ইশতেহার

ইউএনএন বিডি নিউজঃ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপি প্রার্থী মো. হাসান উদ্দিন সরকার ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় টঙ্গীর বাসভবনে তিনি এই ইশতেহার ঘোষণা করেন।১৯ দফা ইশতেহারে তিনি সিটি নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন,দুর্নীতি দূরীকরণ,শিক্ষা,নিরাপত্তা,আবাসন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা নিরাপদ খাদ্য,যানজট নিরসন,নগরীর পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা,সবুজ ও পরিবেশ বান্ধব নগরায়ণ, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, ক্রীড়া-সংস্কৃতি-বিনোদন ও নাগরিক সুবিধার আধুনিকায়ণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
হাসান সরকার তার ইশতেহারে বলেন, ‘গাজীপুরের জনসংখ্যা যেভাবে বেড়েছে সেভাবে নাগরিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। অপর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়েই দু’টি পৌরসভা এবং ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয় এ সিটি কর্পোরেশন। বিপুল ভোটে নির্বাচিত প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানকে ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর কারা অন্তরালে রাখা হয়েছিল। ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে গাজীপুরবাসী।’
তিনি বলেন, ‘অপরিকল্পিত শিল্পায়ণ ও নগরায়নের চাপে এ মহানগর মারাত্মক পরিবেশগত ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে দেশি-বিদেশি নগর বিশেষজ্ঞ ও পরিকল্পনাবিদদের নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করব এবং এরই ভিত্তিতে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।’
ইশতেহারে বলা হয়-
নগরভবন নির্মাণ: সুষ্ঠুভাবে সিটি কর্পোরেশন পরিচালনায় জরুরী ভিত্তিতে নিজস্ব সুপরিসর নগরভবন নির্মাণ অপরিহার্য। বিশ্বের সেরা নগরভবনগুলোর সাথে মিল রেখে প্রখ্যাত স্থাপত্যবিদ এবং পরিকল্পনাবিদদের তত্বাবধানে নির্মিত হবে গাজীপরের ‘নগরভবন’।
সেবা দানকারী অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়: সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও পুলিশ, সড়ক ও জনপথ, ডেসকো, পল্লী বিদ্যুৎ, টিএন্ডটি, ইত্যাদি সংস্থাগুলোর মধ্যে সুষম সমন্বয়ের মাধ্যমে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে।
দুর্নীতি দূরীকরণ ও স্বচ্ছতা : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন হবে দুর্নীতিমুক্ত। এ বিষয়ে কোনো আপোস করবো না। দুর্নীতি বন্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের সব ধরনের সেবা স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত করার প্রয়াস চালাবো। সকল দরপত্রের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।
শিক্ষা: ভোকেশনাল, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ করে বেকার সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, নারীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতিম ও দুঃস্থ, গরীব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান করে স্বল্প আয়ের মানুষের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। নারীদের অগ্রাধিকার দিয়ে বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সমাজ উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রত্যেক এলাকায় গণপাঠাগার স্থাপন করা হবে।
স্বাস্থ্য সেবা ও নিরাপদ খাদ্য: স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার ও সম্প্রসারণ, ‘আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টার’ বা ‘নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিম্ন আয়ের এবং বস্তিবাসী নাগরিকদের সুলভে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে অনলাইন সেবার আওতায় আনা হবে। ফরমালিনমুক্ত ও নিরাপদ বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যহানিকর খাবার ও ভেজালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। মশক নিধনে শহরের ভেতরের সব ড্রেন, নালা ও মশা উৎপাদিত হয় এমন জায়গাগুলোতে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হবে।
আবাসন ব্যবস্থা : গার্মেন্টস শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের জন্য সু-পরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য পর্যায়ক্রমে স্বল্পমূল্যের বাসস্থান নির্মাণ করা হবে। বিভিন্ন সাহায্যকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরামর্শকদের সাথে আলোচনা করে এবং তাদেরকে সাথে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত উদ্যোগে বিভিন্ন বস্তিগুলোকে উন্নত সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে।
নিরাপত্তা: নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হবে। জানমালের নিরাপত্তায় থানাগুলোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলা হবে এবং সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কমিউনিটি পুলিশ ও নৈশ প্রহরী নিয়োগ করে নগরবাসীকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে। শ্রমিক অধ্যুষিত এই মহানগরের শ্রমিক ও মালিকের মাঝে সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন : সব সড়ক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলাচল উপযোগী করা হবে এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। পুরনো রাস্তার সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ফুটপাতগুলো পথচারীদের জন্য, বিশেষ করে নারী-শিশু-প্রতিবন্ধীদের জন্য চলাচলের উপযোগী করে সংস্কার করা হবে।
যানজট নিরসন ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন : যানজট নিরসনে নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। নগর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে নারীদের জন্য বিভিন্ন রুটে বাস চালু করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি পরিকল্পনা নেওয়া হবে। প্রতিটি গণপরিবহনে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
নগরীর পরিচ্ছন্নতা : সড়কের ধুলোবালি ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে যান্ত্রিক ‘ভ্যাকুয়াম ট্রাক’ ক্রয় করা হবে। স্কুল-কলেজ, বাসস্ট্যান্ড, বাজার ইত্যাদি পয়েন্টের কাছাকাছি আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন গণশৌচাগার নির্মাণ করা হবে। নারী-পুরুষের জন্য থাকবে আলাদা কক্ষ, লকার ব্যবস্থা, হাত ধোয়ার জন্য সাবান, পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ, গোসলের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং প্রশিক্ষিত পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও কেয়ারটেকার। সূর্যোদয়ের পূর্বেই সড়কের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শেষ করা হবে। সড়কে ও সড়কের পার্শ্বস্থ বৃক্ষরাজিতে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে ধুলা-বালি নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরণের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পর্যায়ক্রমে মহাসড়ক থেকে ময়লার ভাগাড় সরিয়ে নেওয়া হবে। এলাকাভিত্তিক ময়লা সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে তিন রঙের ডাস্টবিন সরবরাহ করা হবে। যেখানে নগরবাসী জৈব, লোহা ও প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য আলাদা ডাস্টবিনে সংরক্ষণ করবে। বর্জ্য রিসাইকেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও সারের মতো সম্পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বর্জ্য সংগ্রহ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত থেকে আচ্ছাদিত পদ্ধতিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
সবুজ ও পরিবেশবান্ধব নগরায়ণ: পার্ক ও উন্মুক্ত স্থানগুলোকে ঘিরে পরিকল্পিত বৃক্ষায়ণের মাধ্যমে সবুজায়ণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো। নতুন বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম গ্রহণের পাশাপাশি বৃক্ষরাজির যথাযথ পরিচর্যা, সংরক্ষণ ও বৃক্ষবিরোধী ক্ষতিকর কার্যক্রমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি, জমি, বায়ু ও শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।
জলাবদ্ধতা দূরীকরণ : জলবদ্ধতা নিরসনে নিয়মিত এবং বিশেষভাবে বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হবে।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ: প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করবো এবং ৫৭টি ওয়ার্ডেই বিদ্যমান গভীর নলকুপগুলো সচল রাখতে ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক গভীর নলকুপ স্থাপন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট গড়ে তুলে ব্যবহৃত পানি যেন পরিবেশ দূষণের কারণ না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ : নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সব কয়টি ওয়ার্ডে পল্লী বিদ্যুতের পরিবর্তে ডেসার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি সড়কে রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে। গ্যাস সংযোগ প্রদান ও যেসব এলাকায় গ্যাসলাইন নেই সেসব এলাকায় গ্যাস সরবরাহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা চালাবো।
ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও বিনোদন: নগরীর ভেতরের পার্ক, মাঠ ও উন্মুক্ত স্থান চিহ্নিত করা হবে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চার উপযোগী করে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পার্ক ও মাঠ নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে গণগ্রন্থাগার (লাইব্রেরি) স্থাপন ছাড়াও বিশেষ বিশেষ জায়গায় আরও কয়েকটি আধুনিক ডিজিটাল লাইব্রেরি চালু করার ব্যবস্থা করবো। বঙ্গতাজ অডিটোরিয়াম ও টঙ্গী অডিটোরিয়ামকে ব্যবহার উপযোগী ও আরো আধুনিক করে গড়ে তুলবো।
নাগরিক সেবা আধুনিকীকরণ: নাগরিক সেবা, অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন চালু করা হবে। ‘নগর তথ্য কেন্দ্র’ খোলা হবে। এলাকাভিত্তিক ফ্রি ইন্টারনেট (ওয়াইফাই) এর ব্যবস্থা করবো।
অন্যান্য কর্মসূচি: ১৯ মার্চ মুক্তি সংগ্রামের প্রথম সশস্ত্র দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালনের ব্যবস্থা করা হবে। এই যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের নামে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীকে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে বৃত্তি প্রদান করা হবে।
ইশতেহার ঘোষণা অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, জাসাসের সিনিয়র সহসভাপতি বাবুল আহমেদ, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, কেন্দ্রীয় সদস্য মাজহারুল আলম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
More News from বাংলাদেশ
-
-
করোনা মহামারিতে শ্রমজীবী মানুষের সহায়তা নিশ্চিত করুন : সিপিবি
-
-
বগুড়ায় মজুত ফুরিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ
-
শত শত ব্যক্তি প্রতিদিন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে রোগী ভর্তি করাতে পারছেন না